ওমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যা মুসলমানদের জন্য বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। হজের মতো এটি ফরজ নয়, তবে এটি পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। যারা ওমরা করতে চান, তাদের জন্য ওমরা করার সঠিক নিয়ম ও প্রক্রিয়া জানা আবশ্যক। পবিত্র মক্কা শহরের কাবা ঘর প্রাঙ্গণে ওমরা পালন করা প্রত্যেক মুসলিমের স্বপ্ন থাকে।
কিন্তু অনেকে ওমরার নিয়ম না জানা থাকায় ওমরা পালনে ভুল করে থাকেন। তাই এই লিখাটিতে আমি ওমরার নিয়ম-কানুন, করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করছি ।
ওমরার সংজ্ঞা ও গুরুত্ব
ওমরা আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো ‘পরিদর্শন করা’। ইসলামী পরিভাষায় ওমরা হলো নির্দিষ্ট কিছু আমল সম্পাদন করা, যার মধ্যে ইহরাম বাঁধা, কাবা শরিফের তাওয়াফ করা, সাফা-মারওয়ার মধ্যে সাঈ করা এবং মাথার চুল কাটা অন্তর্ভুক্ত। এটি একটি মুস্তাহাব ইবাদত যা মানুষকে আত্মশুদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়।
ওমরা করার নিয়ম (ধাপে ধাপে)
১. ইহরাম বাঁধা
ওমরা শুরু করার জন্য প্রথম ধাপ হলো ইহরাম বাঁধা। ইহরাম হলো নির্দিষ্ট পোশাক পরিধান করে ওমরা পালনের নিয়ত করা।
ইহরাম বাঁধার নিয়ম:
মীকাত নামক নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছানোর আগে ইহরাম বাঁধতে হয়।
ইহরাম বাঁধার আগে গোসল করা সুন্নত। যদি গোসল সম্ভব না হয়, তাহলে ওজু করাই যথেষ্ট।
পুরুষরা দুই খণ্ড সেলাইবিহীন কাপড় পরবে; এক খণ্ড কোমরের নিচে এবং অন্যটি শরীরের ওপরের অংশে।
নারীরা স্বাভাবিক ইসলামসম্মত পোশাক পরবে, তবে মুখমণ্ডল ও হাতের তালু খোলা রাখবে।
দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করা উত্তম।
এরপর নিয়ত করা হবে: **اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ عُمْرَةً** (হে আল্লাহ! আমি ওমরার নিয়ত করলাম)।
চুল কাটার পর ইহরাম শেষ হয়ে যায় এবং ওমরা সম্পন্ন হয়।
ইহরাম অবস্থায় করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়
যা করা যাবে:
বেশি বেশি দোয়া করা।
কোরআন তিলাওয়াত করা।
তাওয়াফ ও সাঈ করার সময় আল্লাহকে স্মরণ করা।
ইবাদতের প্রতি মনোযোগী হওয়া।
অন্যদের সহযোগিতা করা ও ভালো ব্যবহার করা।
যা করা নিষিদ্ধ:
চুল ও নখ কাটা।
সুগন্ধি ব্যবহার করা।
সেলাইযুক্ত কাপড় পরা (পুরুষদের জন্য)।
ঝগড়া-বিবাদ করা।
শিকার করা বা গাছপালা ধ্বংস করা।
অশালীন বা অনুচিত কথা বলা।
ওমরার ফজিলত
ওমরা সম্পাদন করলে পূর্বের গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হয়।
এটি আত্মশুদ্ধির এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
ওমরা পালনের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ লাভ হয়।
ওমরা একটি আত্মার প্রশান্তির উৎস।
হাদিস অনুযায়ী, দুটি ওমরার মধ্যবর্তী সময়ে হওয়া ছোট ছোট গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “একটি ওমরা আরেকটি ওমরার মধ্যবর্তী গুনাহের কাফফারা।” (সহিহ বুখারি)
ওমরার সময় করণীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল
তাওয়াফ ও সাঈ করার সময় বেশি বেশি দোয়া ও তাসবিহ পাঠ করা।
আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং নিজের গুনাহর জন্য অনুশোচনা করা।
নবী (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণ করা।
তওবা ও ইস্তেগফার করা।
পরিবারের ও উম্মতের জন্য দোয়া করা।
কাবা শরিফের সামনে দাঁড়িয়ে আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে চাওয়া।
জমজমের পানি পান করে নিজের ও পরিবারের জন্য বরকতের দোয়া করা।
অন্য হাজিদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা ও তাদের সাহায্য করা।
বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করা।
শেষকথা
ওমরা মুসলমানদের জন্য এক মহান ইবাদত। এটি পালনের মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। যথাযথ নিয়ম ও নিষিদ্ধ বিষয়গুলো মেনে ওমরা পালন করলে তা আরও অধিক সওয়াবের কারণ হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ওমরা পালনের তাওফিক দিন।
ওমরা পালন করতে গেলে এর প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে ভালোভাবে জানা জরুরি। আপনি ভাল কোন এজেন্সি থেকে ওমরা প্যাকেজ নিয়ে ওমরা পালন করতে পারেন। এতে করে ওমরার নিয়ম পালন করার ব্যপ্যারে একজন ভাল আলেমের গাইড পাবেন যিনি নিয়মগুলো শুদ্ধভাবে পালন করতে আপনাকে সাহায্য করবে এবং ভুল ধরিয়ে দিবে।
মনে রাখবেন, যথাযথভাবে নিয়ম অনুসরণ করলে ওমরা আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই মহিমান্বিত ইবাদত পালনের সুযোগ দিন এবং আমাদের সকল গুনাহ ক্ষমা করুন। আমিন।